নিজস্ব প্রতিনিধি: করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত জনজীবনে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। রাজধানীতে ডেঙ্গুর জন্য নির্ধারিত পাঁচটি হাসপাতালের মধ্যে শুধু মিটফোর্ড হাসপাতালেই বর্তমানে নির্ধারিত শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগী দ্বিগুণেরও বেশি। রোগী বেশি হওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। গত সোমবার সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরো ২৩৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার ২১৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ২০ জন। এ ছাড়া এ বছরের শুরু থেকে গত সোমবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেছে ৪২ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে এক হাজার ১৫০ জন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) গত রবিবার ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, ঢাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসের ‘ডেনভি-৩’ ধরনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে। দেশে এই ধরন প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। যারা আগে ডেনভি-১, ২-এ আক্রান্ত হয়েছে, তারা নতুন করে ডেনভি-৩-এ আক্রান্ত হলে সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মে ও জুন মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা তখনই সতর্ক করেছিলেন। ওই সময় এডিসের প্রচুর কনটেইনারও পাওয়া যায়। আবার বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকার ফলে মশার প্রজনন বেড়ে যায়। ডাবের খোসা, পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যাগ, ক্যানসহ অনেক পাত্র এখানে-সেখানে ফেলে দেওয়া হয়। পরিত্যক্ত এসব পাত্রে পানি জমে থাকার ফলে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা সহজেই বংশ বিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া রাজধানীর অনেক বাড়িতে এখন শখের বশে বাগান করা হয়। অনেকে টবে ফুলের গাছ লাগিয়ে থাকে। এসব পাত্রে পানি জমে থাকলে সেখানেও এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে।
এডিস মশা প্রতিরোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাসাবাড়িতে অতিরিক্ত পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ফুলের টব, পানির চৌবাচ্চা, নিচু জায়গা, গ্যারেজে গাড়ির টায়ার ইত্যাদিতে যেন কোনোভাবেই পানি জমে থাকতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের একটু সতর্কতা বড় ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সহায়ক হতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আসুন, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ করি।